
পানির স্মৃতি ও আবেগ থাকার দাবির খন্ডন
পানির স্মৃতি ও আবেগ থাকার দাবির খন্ডন
দাবি: পানির স্মৃতি ও আবেগ আছে, এবং এটি কথা, সঙ্গীত বা ছবির প্রভাবে বিভিন্ন ক্রিস্টাল গঠন করতে পারে
Claim (দাবি)
কিছু লোক, বিশেষত মাসারু ইমোতো নামক এক জাপানি লেখক, দাবি করেন যে পানির আবেগ আছে এবং এটি মানুষের কথা, সঙ্গীত, বা ছবির প্রভাবে বিভিন্ন আকৃতির ক্রিস্টাল গঠন করতে পারে। তাঁর মতে, সুন্দর কথা (যেমন 'ধন্যবাদ') বললে পানি সুন্দর হেক্সাগনাল ক্রিস্টাল তৈরি করে, আর নেতিবাচক কথা (যেমন 'তুমি পাগল') বললে এলোমেলো ক্রিস্টাল গঠন করে। এই দাবি ব্যবহার করে কেউ কেউ 'পানিপড়া' বা 'ঝার-ফুঁক'কে বৈজ্ঞানিক বলে প্রচার করে, এমনকি এটি ক্যান্সারের মতো রোগ সারাতে পারে বলেও দাবি করে।
Claimed By (উৎস)
এই দাবি মাসারু ইমোতোর বই 'Message from Water' এবং 'কষ্টিপাথর' নামক একটি বইয়ের মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এছাড়া, 'কোয়ান্টাম কনশাসনেস মুভমেন্ট' নামক একটি গোষ্ঠী এই ধারণাকে সমর্থন করে। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং অপবিজ্ঞানভিত্তিক প্রকাশনায় এই দাবি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
Rating (মূল্যায়ন)
মিথ্যা প্রমাণিত (Debunk)
অনুসন্ধান (বিস্তারিত)
ইমোতোর দাবি বিজ্ঞানসম্মত নয়। পানির অণু (H2O) একটি সাধারণ রাসায়নিক যৌগ, যার কোনো স্নায়ুতন্ত্র বা স্মৃতিধারণ ক্ষমতা নেই। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কোনো দাবি প্রমাণ করতে হলে তা পিয়ার রিভিউ এবং ডবল ব্লাইন্ড পদ্ধতির মাধ্যমে যাচাই করতে হয়। ইমোতোর গবেষণা এই মানদণ্ড পূরণ করেনি। তিনি তার ফলাফল পুনরাবৃত্তি করতে ব্যর্থ হয়েছেন, এবং জেমস র্যান্ডির মিলিয়ন ডলার চ্যালেঞ্জে অংশ নেননি, যেখানে তাকে ডবল ব্লাইন্ড পদ্ধতিতে তার দাবি প্রমাণ করতে বলা হয়েছিল।
পানির ক্রিস্টাল গঠন বরফের অবস্থায় ঘটে, যখন পানির অণু হাইড্রোজেন বন্ধনের মাধ্যমে হেক্সাগনাল ল্যাটিস তৈরি করে। এই গঠন তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থার উপর নির্ভর করে, কথা বা সঙ্গীতের উপর নয়। প্রতিটি বরফ ক্রিস্টাল অনন্য হয় বায়ুমণ্ডলীয় প্রভাবের কারণে, এবং এটি কৃত্রিমভাবে পরিবর্তন করা যায়। স্ট্যানফোর্ডের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. উইলিয়াম টিলার বলেছেন, বাহ্যিক পদার্থ বা জমাট বাঁধার হার পরিবর্তন করে ক্রিস্টালের আকৃতি সহজেই বদলানো যায়। ইমোতোর পরীক্ষায় এই অবস্থাগুলো নিয়ন্ত্রিত বা পরিমাপ করা হয়নি।
জেরাল্ড পল্যাকের 'পানির চতুর্থ দশা' (H3O2) দাবিও অবৈজ্ঞানিক। H3O2 কোনো অণু নয়, বরং এটি দ্রবীভূত হাইড্রোক্সাইড আয়ন, যা পানির সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। তার গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে নিম্নমানের জার্নালে (ইম্পেক্ট ফ্যাক্টর ০.৯৭৩), যা বিজ্ঞানী সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
অন্যান্য উদাহরণ, যেমন জ্যাক বিনভিনিস্তে এবং লুক মন্টাগনিয়ের গবেষণা, যারা পানির স্মৃতি দাবি করেছিলেন, তাদের ফলাফল পুনরাবৃত্তি করা যায়নি, ফলে তা বাতিল হয়েছে। 'পানিপড়া' বা 'ঝার-ফুঁক' এর কোনো চিকিৎসাগত কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়নি। ডবল ব্লাইন্ড ট্রায়ালে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।
উপসংহার
পানির স্মৃতি বা আবেগ থাকার দাবি অপবিজ্ঞান। মাসারু ইমোতোর গবেষণা পিয়ার রিভিউ বা ডবল ব্লাইন্ড পদ্ধতির মানদণ্ড পূরণ করেনি। পানির ক্রিস্টাল গঠন বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থার উপর নির্ভর করে, কথা বা সঙ্গীতের উপর নয়। 'পানিপড়া' বা 'ঝার-ফুঁক' এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এই দাবিগুলো বিজ্ঞান দিয়ে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
রিসোর্স লিংক (নন-হাইপারলিঙ্কড)
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি: www.stanford.edu
স্কেপটিকাল ইনকুইরার ম্যাগাজিন: www.skepticalinquirer.org
মাসারু ইমোতো, Message from Water, ১৯৯৯