
টেস্টিং সল্ট ব্যবহারে জরিমানা পেলেন এক দোকানি; আসলেই কি টেস্টিং সল্ট ক্ষতিকর?
টেস্টিং সল্ট ব্যবহারে জরিমানা পেলেন এক দোকানি; আসলেই কি টেস্টিং সল্ট ক্ষতিকর?
দাবি: টেস্টিং সল্ট (MSG) ক্ষতিকর এবং স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
ফ্যাক্টচেক রিপোর্ট
প্রকাশনা: খোঁজ টিম
তারিখ: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
প্রেক্ষাপট
সম্প্রতি এক নিউজে দেখা যায় খবরে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করায় মোটা অংকের জরিমানার নোটিশ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের এক দোকানি। টেস্টিং সল্ট কি আসলেই ক্ষতিকর? চলুন দেখে নিই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে।
এই ফ্যাক্টচেক রিপোর্টটি খোঁজ টিমের অনুসন্ধান এবং খোঁজ এআই ফ্যাক্টচেকিং ফিচার ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন বিজ্ঞানীয় জার্নাল, স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট এবং নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেছি।
দাবি
টেস্টিং সল্ট (MSG) ক্ষতিকর এবং স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
যাচাই-বাছাই
টেস্টিং সল্ট কী?
টেস্টিং সল্ট, যা বাংলাদেশে প্রায়শই "টেস্টিং সল্ট" নামে পরিচিত, আসলে মোনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (MSG) এর একটি লোকপ্রিয় নাম। এটি একটি ফ্লেভার এনহ্যান্সার যা খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে এশিয়ান রান্না এবং প্রসেসড ফুডে।
MSG প্রাকৃতিকভাবে অনেক খাবারে (যেমন টম্যাটো, চিজ, মাশরুম) পাওয়া যায় এবং এটি L-গ্লুটামিক অ্যাসিড থেকে তৈরি। বাংলাদেশে এটি "টেস্টিং সল্ট" নামে বাজারজাত করা হয় কারণ এটি খাবারের স্বাদ "টেস্ট" বা উপাদানগুলোকে আরও সুস্বাদু করে তোলে।
বৈজ্ঞানিকভাবে টেস্টিং সল্ট কতটা নিরাপদ?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) এবং ইউরোপীয় ফুড সেফটি অথরিটি (EFSA) সকলেই MSG-কে "সাধারণত স্বীকৃত নিরাপদ" (GRAS) হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এর গ্রহণযোগ্য দৈনিক পরিমাণ (ADI) শরীরের ওজন প্রতি কিলোগ্রামে ৩০ মিলিগ্রাম, যা সাধারণ খাদ্য গ্রহণের চেয়ে অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, একটি সাধারণ খাবারে MSG-এর পরিমাণ ০.৫ গ্রামের কম থাকে, যা কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না।
১৯৬০-এর দশকে "চাইনিজ রেস্তোরাঁ সিন্ড্রোম" (CRS) নামে একটি মিথ ছড়িয়েছিল, যেখানে MSG খাওয়ার পর মাথাব্যথা, ফ্লাশিং ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায় বলে দাবি করা হয়। কিন্তু পরবর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে এই স্টাডিগুলো ভুল এবং বর্তমানে কোনো শক্ত প্রমাণ নেই যে সাধারণ পরিমাণে MSG ক্ষতিকর।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি: কী বলে গবেষণা?
MSG-এর স্বাস্থ্য প্রভাব নিয়ে মিশ্র ফলাফল আছে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে এটি নিরাপদ।
ইতিবাচক দিক:
- MSG খাদ্যের স্বাদ বাড়িয়ে কম লবণ ব্যবহার করতে সাহায্য করে, যা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়
- কিছু স্টাডি দেখায় যে এটি অ্যাপেটাইট নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে
সম্ভাব্য নেগেটিভ দিক:
- কম (১% এরও কম) লোকের মধ্যে "MSG সিম্পটম কমপ্লেক্স" দেখা যায়, যেমন মাথাব্যথা, বুকে চাপ বা পালপিটেশন – কিন্তু এগুলো খালি পেটে ৩ গ্রামের বেশি ডোজে হয় এবং অ্যালার্জি নয়
- কিছু প্রাণী গবেষণায় MSG-কে ওবেসিটি, নিউরোটক্সিসিটি বা রিপ্রোডাকটিভ সমস্যার সাথে যুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু এগুলো মানুষের উপর প্রযোজ্য নয় কারণ ডোজ অস্বাভাবিক
- মানুষের উপর ক্লিনিকাল ট্রায়ালে কোনো দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি দেখা যায়নি
বাংলাদেশী প্রসঙ্গ
স্থানীয় সোর্সে কিছু দাবি আছে যে MSG কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে ঘুমের সমস্যা বা উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করে, কিন্তু এগুলো বিজ্ঞানীয়ভাবে প্রমাণিত নয়। বরং, অতিরিক্ত লবণ (টেবিল সল্ট) এর চেয়ে MSG-এর ঝুঁকি কম।
বিশ্লেষণ
নিউজে উল্লেখিত ঘটনায় দোকানিকে জরিমানা দেওয়া হয়েছে কারণ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন MSG-কে "ক্ষতিকর" মনে করে, যা একটি সাধারণ মিথের উপর ভিত্তি করে।
বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দেখায় যে সাধারণ পরিমাণে (খাবারের সাথে) MSG নিরাপদ এবং কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই।
উপসংহার
টেস্টিং সল্ট (MSG) সাধারণ পরিমাণে ব্যবহার করলে ক্ষতিকর নয়। এটি একটি মিথ যা ডিবাংক করা যায়।
নিউজে উল্লেখিত ঘটনায় দোকানিকে জরিমানা দেওয়া হয়েছে কারণ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন MSG-কে "ক্ষতিকর" মনে করে, যা একটি সাধারণ মিথের উপর ভিত্তি করে। বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দেখায় যে সাধারণ পরিমাণে (খাবারের সাথে) MSG নিরাপদ এবং কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই।
তবে, যদি কেউ সেন্সিটিভ হন, তাহলে লেবেল চেক করে এড়িয়ে চলা উচিত। এই ডিবাংকিংয়ের মাধ্যমে আমরা আশা করি মানুষ সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবেন।