সাতক্ষীরায় এক ব্যক্তিকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি জামায়াত নেতা নন

সাতক্ষীরায় এক ব্যক্তিকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি জামায়াত নেতা নন

মিথ্যা

সাতক্ষীরায় এক ব্যক্তিকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি জামায়াত নেতা নন

দাবি: সাতক্ষীরায় ভবেন্দ্র দাসকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত আবদুল আহাদ গাজী জামায়াত নেতা

লেখক: রিউমার স্ক্যানার৩১/৮/২০২৫

দাবি

সম্প্রতি সাতক্ষীরায় চুক্তি ভঙ্গ করে অন্যের কাছে জমি বিক্রির অভিযোগে ভবেন্দ্র দাস নামের এক ব্যক্তিকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম আব্দুল আহাদ গাজী। ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে তাকে জামায়াত নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামায়াত নেতা দাবি করে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত আবদুল আহাদ গাজী জামায়াত নেতা নন। প্রকৃতপক্ষে, তিনি একটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি নেতা।

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে গত ২৯ আগস্ট “খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধরের অভিযোগ বিএনপির নেতার বিরুদ্ধে” শিরোনামে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে অভিযুক্ত আব্দুল আহাদ গাজীকে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অন্যান্য গণমাধ্যমেও একই রকম তথ্য পাওয়া যায়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়- “সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় চুক্তি ভঙ্গ করে অন্যের কাছে জমি বিক্রির করার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর করার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২৯ আগস্ট) সকালে উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খেশরা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল আহাদ গাজীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন ভবেন্দ্র দাস (৫৯) নামের এক ব্যক্তি।”

ঘটনার জেরে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলেও সংবাদ পাওয়া যায়। সংবাদে বলা হয়- “ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আহাদ আলী মোড়লকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। খেশরা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আব্দুল গফ্ফার গাজী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘অন্যায় করলে যে-ই হোক, তাকে শাস্তি পেতেই হবে। বিএনপি কোনো অন্যায়কারীকে দলে প্রশ্রয় দেয় না।’”

একই ধরনের তথ্য ওই ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতার পোস্ট থেকেও পাওয়া যায়। ইউনিয়ন বিএনপি সার্চ কমিটি সম্মত হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার ১০ জুলাইয়ের একটি পোস্টে সাধারণ মানুষের সঙ্গে চা-চক্র ও মতবিনিময়ের আড্ডায় ইউনিয়ন বিএনপি ও যুবদল নেতাদের সঙ্গে আহাদ আলী মোড়ল ওরফে আহাদ আলী গাজীর নামও পাওয়া যায়। সেখানে তাকে ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও, ওই উপজেলার স্থানীয় এক সাংবাদিকের পোস্ট থেকেও একই তথ্য মেলে।

ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়, প্রায় তিন মাস আগে ভবেন্দ্র দাস সাড়ে ৯ শতাংশ জমি বিক্রির জন্য আবদুল আহাদ গাজীর সঙ্গে ৬৮ হাজার টাকায় চুক্তি করেন এবং কয়েকবারে ২৫ হাজার টাকা নেন। পরে নির্ধারিত সময়ে বাকি টাকা না পেয়ে ৭ আগস্ট জমিটি তিনি দ্বিগুণ মূল্যে অন্যের কাছে বিক্রি করেন। জমি অন্যের কাছে বিক্রির বিষয়টি জানাজানি হলে ভবেন্দ্র দাসকে আবদুল আহাদ তার বাড়িতে ডেকে পাঠান। ভবেন্দ্র দাস তার বাসায় আসলে দুজনের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাঁকে পিছমোড়া করে একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর করার ঘটনা ঘটে।

অভিযোগের বিষয়ে আবদুল আহাদ গাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবেন্দ্র আমার সঙ্গে চুক্তি করেও জমি লিখে দিতে টালবাহানা করছিলেন। পরে গোপনে অন্যের কাছে বিক্রি করে দেন। খবর পেয়ে তাঁকে ডাকা হয়। তবে ঘটনা জানাজানি হলে এলাকাবাসী তাঁকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে। এ ঘটনায় তিনিও ভুল করেছেন, আমিও ভুল করেছি। আমার অন্যায় হয়েছে।’

সুতরাং, ভবেন্দ্র দাস নামের এক ব্যক্তিকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি জামায়াত নেতা- শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

সিদ্ধান্ত

সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় ভবেন্দ্র দাসকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত আবদুল আহাদ গাজী জামায়াত নেতা নন, বরং তিনি খেশরা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ঘটনার পর তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র

উৎসসমূহ

প্রথম আলো: খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধরের অভিযোগ বিএনপির নেতার বিরুদ্ধে

প্রতিবেদনে আবদুল আহাদ গাজীকে খেশরা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

উৎস দেখুন →

রূপালী বাংলাদেশ

অভিযুক্ত ব্যক্তির বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে।

উৎস দেখুন →

ফেসবুক/মেহেদি হাসান সাগর

স্থানীয় সাংবাদিকের পোস্টে আবদুল আহাদ গাজীকে বিএনপি নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

উৎস দেখুন →

রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণ

ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন: আবদুল আহাদ গাজী জামায়াত নেতা নন, বিএনপি নেতা।

উৎস দেখুন →

ট্যাগসমূহ

সাতক্ষীরাভবেন্দ্র দাসআবদুল আহাদ গাজীবিএনপিজামায়াত

এই পোস্ট শেয়ার করুন